হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, মোস্তফা মইনী আরানী বলেন: কোমের হাওজা ইলমিয়া গত একশ বছরে শিক্ষা, গবেষণা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে ইসলামি বিপ্লবের পর এই অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে এবং হাওজা আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি কার্যকর ও সক্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
কাশান ও আরান-বিদগল এলাকার পার্লামেন্ট সদস্য মোস্তফা মইনী আরানী, কোম হাওজার পুনঃপ্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উপলক্ষে হাওজা নিউজ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন: বিপ্লব-পূর্ব সময়ে প্রায় ১০০টি হাওজা ইলমিয়া ছিল, কিন্তু এখন শুধুমাত্র ইরানেই ৫০০-র বেশি হাওজা ইলমিয়া (পুরুষদের জন্য) এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শত শত প্রতিষ্ঠান ইরানি হাওজার তত্ত্বাবধানে কাজ করছে।
তিনি বলেন, কোম হাওজার একটি বড় অর্জন হলো শিক্ষায় গুণগত ও পরিমাণগত অগ্রগতি। পূর্বে শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল প্রচলিত ও সাধারণ, এখন সেখানে বহু বিশেষায়িত শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—যেমন: ফিকহ, উসুল, কালাম, তাফসির, ইসলামি আইন, অর্থনীতি, রাজনীতি ও ইসলামি দর্শন।
বর্তমানে হাওজায় শিক্ষার ধাপগুলো (স্তর ১ থেকে ৪ এবং বহির্ভূত ফিকহ) সুসংগঠিত হয়েছে, পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং শিক্ষাগত পরামর্শ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ফিকহ ও উসুল "দারস খারেজ" (উচ্চতর ক্লাস) বিপ্লব-পূর্ব সময়ে হাতে গোনা থাকলেও এখন এই ক্লাসের সংখ্যা ৫০০-এর বেশি, এবং নানা বিষয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোম হাওজা গবেষণা ও ইসলামি জ্ঞানের উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এখন পর্যন্ত হাওজার আলেমরা ১ লাখের বেশি ধর্মীয় গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। ফিকহ, উসুল, দর্শন, কালাম এবং ইসলামি মানবিক বিষয়ে শত শত গবেষণা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এছাড়া, ২.৫ কোটি ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর বিশেষায়িত কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
সমসাময়িক ফিকহ এবং বিষয়নির্ভর গবেষণায় হাওজা ইলমিয়া আধুনিক ইস্যুগুলো—যেমন: চিকিৎসা-ফিকহ, ডিজিটাল অর্থনীতি, গণমাধ্যম এবং জননীতি—নিয়ে চিন্তাভাবনা ও মতবাদ উপস্থাপন করেছে।
পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও পৌরসংস্থা সম্পর্কিত কমিশনের সদস্য হিসেবে মইনী আরানী বলেন: কোম হাওজা ইসলামি শাসনব্যবস্থা ও সামাজিক ফিকহে এমন এক শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যা বৈশ্বিক মঞ্চে ইসলামি শাসনব্যবস্থার একটি কার্যকর মডেল উপস্থাপন করেছে। বর্তমানে হাওজার আন্তর্জাতিক প্রসার ১০০-এর বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ইসলামি জ্ঞান ও ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্ররা ক্বোমে এসে পড়াশোনা করছে।
তিনি বলেন, কোম হাওজায় ডিজিটাল পরিবর্তনও দৃষ্টিগোচর:
অনলাইন ক্লাস,
শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম,
গবেষণামূলক সফটওয়্যার
এবং ডিজিটাল গ্রন্থাগার ব্যাপক হারে গড়ে উঠেছে।
মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট তৈরিতেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, যেখানে শত শত ই-বুক, ইসলামি জ্ঞানভিত্তিক সফটওয়্যার ও ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে।
মইনী আরানী বলেন, ইসলামি বিপ্লব এবং সভ্যতা গঠনে কোম হাওজার ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ইসলামী সভ্যতার নির্মাণে হাওযা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ইসলামি মডেল উপস্থাপন করছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন: হাওজা ইলমিয়া কোম গত একশ বছরে একটি প্রথাগত প্রতিষ্ঠান থেকে এক গতিশীল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যা একই সঙ্গে ধর্মীয় মৌলিকত্ব রক্ষা করছে এবং আধুনিক চাহিদার সাড়া দিচ্ছে। এই অগ্রগতি—শিক্ষা, গবেষণা, ফিকহ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে—হাওজাকে ইসলামী বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানকেন্দ্রে পরিণত করেছে।
আপনার কমেন্ট